বিশ্বের কনিষ্ঠতম হেডমাস্টার’ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে বাবর আলি , জানুন ওনার সম্পর্কে -BanglarBarta24x7

 

বাবর আলি

বয়সটা সংখ্যা মাত্র মানুষের জন্য নতুন কিছু করার জেদ,প্রতিভা থাকলে বয়সটা কোনো ব্যপার না তাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে বাবর আলি মাত্র ১৬বছর বয়সে বিশ্বের কনিষ্ঠতম হেডমাস্টার হিসবে পরিচিতি পেয়েছে

 

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভাবতা গ্রামের ছেলে বাবর আলি সাধারণ একটা গরীব ঘরের ছেলে, গ্রামে থেকে বড়ো হওয়া যুবক আজ বিশ্বের কনিষ্ঠতম হেডমাস্টার বাবর আলি প্রথম পড়ানো শুরু করে মাত্র বছর বয়স থেকে প্রতিদিন স্কুলে নিজে যা পড়তো,শিখতো সেগুলোই সকলকে শেখানো শুরু করে

 

ফোর্বস ম্যাগাজিনেএশিয়ার ৩০ জন তরুণ অনুপ্রেরণাকারী উদ্যোগীতালিকার মধ্যে রয়েছে তাঁর নাম ভারতের সিবিএসই দশম শ্রেণী ইংরেজি বই, কর্নাটক রাজ্যের সরকারি পিইউসি ইংরেজি বইতে সবাই পড়ছে তাঁর নাম অভূতপূর্ব প্রেরণার কাজ অনেক দূরে ইউরোপের একটি দেশ লুক্সেমবার্গ, সেখানে কয়েকটি স্কুলে পড়ানো হচ্ছেঅনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিহিসেবে তাঁর জীবনের গল্পতাঁর নাম বাবর আলি থাকেন আমাদের এই বাংলায় ২০০৯ সালেহাঙ্গার টু লার্ননামে একটি সিরিজ প্রচার করে বিবিসি তখন বাবর আলির বয়স ১৬ সিরিজে তাঁকেবিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষকহিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় একই বছরইন্ডিয়ান অব দ্য ইয়ারহিসেবে ভারতের মিডিয়া স্বীকৃতি পান তিনি

 

বাংলার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভাবতা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বাবর আলিআমি যখন স্কুলে যেতাম তখন আমার বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে নোংরা আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে কিছু জিনিস খোঁজার চেষ্টা করত আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না তাই আমি ওদের আমার বাড়িতে আসতে বলি, যাতে ওদের লিখতে পড়াতে শেখাতে পারি আমার বাড়ির উঠোনেই একটা স্কুল গড়ে তুলি

 

বাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার দূরে বেলডাঙা সিআরজিএস বিদ্যাপীঠে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তে যেতেন বাবর আলি স্কুলে যা কিছু শিখতেন, ফিরে এসে সেগুলোই পাড়ার বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পড়াতেন এভাবেই জন্ম নেয় আশ্চর্য এক স্কুল – ‘আনন্দ শিক্ষা নিকেতন

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র বাবর আলি নিজের তৈরি স্কুলে প্রথম দিকে শিশুশ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতেন দরিদ্র এলাকা হওয়ায় কোনো ফি রাখেননি শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের সব মানুষ যেন সাক্ষরতা অর্জন করতে পারে

 

গ্রাম বাংলার জনবসতির একটা বড় অংশই জীবনধারণের স্বার্থে ছোটবেলা থেকেই বাড়ির বড়দের সঙ্গে কাজে হাত লাগাতে বাধ্য হয় বাবরের বাবামা পড়াশুনো শেষ করেননি কিন্তু ছেলের এই উদ্যোগে পাশে আছেন মাবাবা বাবরের মা বানুয়ারা বিবি পেশায় একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বাবা জুট ব্যবসায়ী দুজনই স্কুলছুট তবে ছেলে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে মাবাবা গর্বের অন্ত নেই একটা শিক্ষিত সমাজ গড়তে লড়ছেন বাবর নিয়ম করে গণিত, বিজ্ঞান, ভুগোল, ইতিহাস, ইংরেজি পড়াচ্ছেন ওদের আর শেখাচ্ছেন ঝরঝরে বাংলায় লিখতে

 

বাবরের স্কুল শুরু হয় মাত্র আট জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাদের সঙ্গে ছিল নিজের বোন, আমিনা খাতুন বিকেল বেলা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নিজের বাড়ির উঠোনে ওই ছেলেমেয়েগুলোকে লেখাপড়া শেখাতেন বাবর ভাবতে অবাক লাগবে, স্কুলটিতে এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় ৩০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী এবং ১০ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষকদের ছয়জনই এই স্কুলেরই পাস করা একসময়ের ছাত্র আরো আশ্চর্যের যে সম্পূর্ণ অবৈতনিক এই স্কুলে বই এবং পড়াশোনার অন্যান্য সরঞ্জামও দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের

 

খুব আনন্দের বিষয় যে আজ বাবর আলির হাত ধরার জন্যে প্রচুর সাহায্য আসছে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে ২০১৫ সালে বাড়ির উঠোন থেকে একটা বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছে বাবর আলি স্কুল বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি স্কুল হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেআনন্দ শিক্ষা নিকেতন

 

বাবর আলীর কাজ অনেক অনেক বড় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্র একটা স্কুল খোলার সাহস করেছিল নিজে দূরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করা, সেই সঙ্গে নিজের তৈরি স্কুলের ছাত্রদের পড়ানোএকটা অভূতপূর্ব বড় ব্যাপার দুস্থ পরিবার, কাগজ কুড়ানো বাচ্চাগুলো তাঁর স্কুল থেকে পড়ে শিক্ষিত হচ্ছে

 

বাবর আলির বয়স এখন ২৬ ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ইতিমধ্যে লাভ করেছেন এখন আবার ইতিহাসে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশুনো করছেনশিক্ষা যেন অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল না হয়‘ – এই লক্ষ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ প্রায় ১৬ বছর ধরে এভাবেই নিজের শেখা অন্যদের শিখিয়ে এসেছেন বাবর আলি স্বামী বিবেকান্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত বাবর আলি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার বাবরের কথায়, ‘’কোনও সরকারই একা কোনও নিয়ম বদলাতে পারবে না এজন্য সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে

 

বাবর আলি‘ – আমাদের দেশের এক বিরাট অভূতপূর্ব পরম প্রাপ্তি

Leave a Comment